Monday, 27 February 2017

আওর চাবি খো যায়




সাইকেল নিয়ে যাচ্ছেন, বাঁকের মুখে উল্টোদিক থেকে আসা অপর এক বয়স্ক ভদ্রলোককে দেখে আপনি কী করবেন? ভাববেন,  উনি কোনদিক থেকে সাইড নেবেন, আপনাকে আন্দাজ করতে হবে ওই অল্প সময়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে হবে, আপনার সাইড কোনটা, ডানদিক না বাম হিসেব মতো বাঁদিকেই আপনার যাওয়ার কথা কিন্তু সবার জন্য সব ধরণের মানুষের জন্য হিসেব একরকম নয় হতেই পারে উনি উল্টোদিক থেকে একটা শর্টকাট নিতে চাইছেন সেক্ষেত্রে, আপনাকেও উল্টোদিকে গিয়ে বাঁক নিতে হবে আর উনি যদি ঠিক রাস্তায় আসেন, আপনিও ঠিকঠাক রাস্তা পার হবেন কিন্তু, ওই অপরিচিত ভদ্রলোকের মন বুঝে নিতে হবে বেশি সময় না খরচ করেই, তৎক্ষণাৎ না হলেই ঝামেলা চ্যাঁচামেচি!
আমাদের দৌড় ঠিক ওই পর্যন্তই আন্দাজ অপরকে বুঝতে আমাদের ওই একটাই রাস্তাআপনি নির্ঝঞ্ঝাট চালিয়ে যেতে পারবেন, যতক্ষণ আপনার আন্দাজ আপনাকে ঠিকঠাক সঙ্গ দেবে না হলে আপনি অসহায় যদি বলেন, আসলে আমি ঠিক বুঝতে পারিনি! কেউ আপনাকে ছেড়ে কথা বলবে না
আমি বলেছিলাম, কিচ্ছু হচ্ছে না কেউ উত্তর করেনি সবাই আসলে জানে, বিশ্বাস করে, কোথাও কিচ্ছু হবার নয়, কিছুই বদলাবে না কমলদা লিখেছেন, ভেঙে পড়ার আগে ভেঙে বেড়িয়ে আসতে হবে হাস্যকর কথাবার্তা আরও হাস্যকর, এখনও কিছু লোক এসব বিশ্বাস করে লেখে আলোচনা করে যারা তার চেয়েও হাস্যাস্পদ হতে চান, তারা আবার দল পাকিয়ে, মিটিং করে, দিন দেখে, পূর্ণিমা-অমাবস্যা মাথায় রেখে, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে, একমুলুক থেকে আর এক মুলুকে গিয়ে, চোদ্দটা চা খেয়ে, পনের প্যাকেট বিড়ি খেয়েজমায়েত করে, মাইক ফুঁকে, শ্লোগান দিয়ে, গান গেয়ে, মিছিল করে কী যেন অদ্ভুত কিছু একটা করতে চায় কেউ ছাত্র, কেউ টিউশানি, কেউ হসপিটাল, কেউ ব্যাংক, কেউ স্কুল, কেউ কলেজে পড়ায়, কেউ তেমন-বাজার-নয়-উকিল, কেউ রুগী-হয়-না-ডাক্তার, কেউ দাদাদের কেউ তার টিকিটটা কিনবে, চা খাওয়াবে, সিগারেট খাওয়াবে বলে আসা বেকার ফেরার ট্রেনে কেউ ছেলের জন্য কলা, লেবু, মেয়ের জন্য ঝুরিভাজা, কিলিপ, বউ-এর জন্য সেফটিপিন, স্ক্রচব্রাইট কিনতে কিনতে, ছেলের টিউশানি, মেয়ের পরীক্ষা, বোউ-এর কন্সটিপেশান নিয়ে আলোচনা করতে করতে বাড়ি ফেরে
মানুষের মিছিলে হাঁটার তো একটা কারণ থাকে গণেশ মিছিলে গেছিল ওর দোকানে নাহলে তালা পরে যেত, সঞ্জু মিছিলে গেছিল বেলতলায় একটা জায়গা দখল করে চাদোকান করবে, চাঁদুদা মিছিলে গেছিল পৌরসভা ওর বাড়ির প্ল্যানটা আটকে রেখে ছিল, পুকুরের দিকে চাঁদুদা কিছুটা, এই ফুট-দুয়েক মারতে চেয়েছিল বলে, অনুপম ভাল ছেলে, শিক্ষিত ছেলে মিছিলে গেছিল, সঞ্জয়ের বোনের সঙ্গে একটা ইন্টুমিন্টু কেস ছিল, ইতিহাসে অনার্স বনাদা মিছিলে গেছিল বছর বছর এসেসসি দিয়ে ক্লান্ত, বিমল,  নাহলে ওর বাড়ির ওপর দিয়ে পার্টি থেকে ড্রেন করে দিচ্ছিল, সুভাষ, ওর বাবার ইনকাম-সার্টিফিকেট দরকার কলেজে ফি মুকুব হবে, আমার বাবা মিছিলে গেছিল একটা ত্রিপলের জন্য,গোয়ালঘরে জল পরছিল, আমি গেছিলাম, আমার এক ভাই দেশ থেকে বেরা গলে পালিয়ে এসেছিল, আর যাবে না, এদেশে পরিচয়হীন, একটা পরিচিতি, ওখানে এখনো এসব? কী জানো তুমি! বাঙালিরা ওখানো এখনও দ্বিতীয়শ্রেনির নাগরিক, কোন স্বাধীনতা নেই, গোয়ালে থেকে দুধেল গাই... বাড়িতে বড় মেয়ে থাকলে ভাবছ, সে বেড়তে পারে সন্ধের পরে! তবে যে ফেসবুকে দেখি, ওরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ চায়, সংবিধান সংশোধনের দাবি! আগে নিজেদের স্বভাব সংশোধন করতে বলো! ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের বাইরেও দেশ আছে, আমি গেছিলাম, ওর একটা রেশন কার্ডের জন্যপ্রসেঞ্জিত, কোত্থাও কিছু নেই, সিঙ্গুর নিয়ে নাটকে যে বুদ্ধদেবকে দুমাস আগে যা-তা করেছিল, হঠা সিপিএম, ভোটে দাঁড়ালপার্টি থেকে ওদের ঘর করে দেবে পার্টি থেকে আগে অনেক কিছু করে দিত ঘর করে দিত, চাল দিত, একশদিনের কাজ দিত, কেরোসিন দিত, বৃষ্টি হলে চিঁরে দিত, স্বামীস্ত্রী অশান্তি, দুভায়ে ঝগড়া হলে মিটিয়ে দিত, মাধ্যমিকের আগে টেস্ট পেপার দিত, মেদিবসে খবরের কাগজ দিত এখন তৃণমূল দেয় বরং বেশ কিছু এক্সট্রা দেয় পুজোর সময় শাড়ি, লুঙ্গি, ভোটের সময় ছাতা, গেঞ্জি আরও কত কী! যেসব জিনিষ ছোটলোকেদের দরকার
কিন্তু মানস কেন খামোকা চল্লিশ মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে কলকাতায় যাবে মিছিল করতে?  শান্তনু কেন যাবে?  তপনদা ইমন কেন যাবে? বরং ইচ্ছে হলে সুজিতের মতো গালাগাল করুক সবাইকে, সবাই খারাপ, ও শুধু ভালো!  কমলদার মতো কৃষ্ণেন্দু সূর্যেন্দুদার মতো কবিতা লিখুক, পত্রিকা করুক, গীতীআলেখ্য করুক আর পরস্পর পরস্পরকে নিয়ে আড়ালে হাসিমস্করা করুক, শ্রীজাতর থেকে টোকে জীবনানন্দ থেকে টোকে, সে রবীন্দ্রনাথ, ও শ্লোগান, তাহলে শালা তুই বিয়ের ছড়া,  রূপশালি, রত্না, মাসুরি, ধান, আলু, , , , বাঁশপাতা, কুমড়োপাতা, সৃষ্টি, গুষ্টি, আমি আর গোপালের মা হেঁটে চলেছি,  ব্লাউজ, লুঙ্গি, অনূভব, ঘেণ্ণা, বলাকা, কাক, পায়রা, কীর্তীবাস, কাসিরাম, কবিতা প্রতিমাসে, ঢেঁকুর প্রতিঘণ্টায়  নামক কবিতার পত্রিকা করুক,  মনে মনে সবাই সবাইকে গালাগাল করুক, যেমন আমরা সব সময় সবাইকে করি, কেউ মমতার বিরুদ্ধে গলা তুললেশালা সিপিয়েমের বাচ্চা! মমতার হয়ে বললে,  শালা তৃণমূলের কুত্তা! যারা সিপিয়েম তৃণমূল দুদলকেইই গালাগাল দেয়, শালা মাওবাদী! যারা তাদেরকেও খিস্তি মারে,  বুঝে যাই, শুয়োরটা এসিউসি! কিংবা সিপিএমেল! যারা মনে মনে তাদেরকেও গালাগাল দেয়, কিন্তু মুখে কিচ্ছু বলে না,  তারা হয় অনুকূল ঠাকুর, নয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
একবার আমার এক মামাতো দাদা এসব শুনে বলেছিল, আমি নেতিবাদী!  আমি বুঝতে পারিনি, একবার লেনিনকে নিয়ে আনন্দবাজারে ছাপা হওয়া দুয়েকটা জোকস শোনাতে, দেখলাম রেগে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারিনি সিপিয়েম নিশ্চই হবে না, তাহলে কোন জাত? আন্দাজ মিলছে না, ওদের ফ্যামিলিতে কেউ কখনও সিপিয়েম করতে পারে না, দিদা ছিল আজীবন কংরেসী,  অদ্ভুত, পাকিস্তান থেকে তারা খেয়ে অর্ধেক আত্মীয়স্বজন খুইয়ে, গান্ধীর সাপোর্টার, সুতরাং, সিপিএম নিশ্চই নয়, তবে কোন জাত? আমার আন্দাজ কাজে দিচ্ছে না, পরে একদিন ফোন, নন্দীগ্রাম যাবি? তখন ওইসব নিয়ে খুব চলছে আর কী! আমি তো অবাক!  তুই এসবে? কীব্যাপার! আমি যাচ্ছি, যাবি তো চল্ বললে আগে থেকে বাসে সিট বুক করব আমি ভাবলাম, গেলে হয়!  আর কারা?  চুঁচুড়া থেকে বুদ্ধিজীবীদের একটা দল যাচ্ছে, হাওড়া থেকে বাস গিয়ে দেখি, ওমা!  এ শালারা  তো এসিউসি! এটা কী হল! না এই পার্টিটাই পুরোবুদ্ধিজীবীদের কবে যেন এসিউসি হয়ে গেছে, তাই নেতিবাদী নয়, বিশ্বাস করে চাড্ডি মিটিং মারিয়ে আর বছরে একটা করে বন্ধ করে ওরা একদিন(সাম ডে! যা কোনদিন আসবে না!) দেশের শাসনক্ষমতা দখল করবে, ছেলের হাতের মোয়া!  তারপর দেশে ম্যাজিক করে সাম্যবাদ আনবে, তবে মজা হয়েছিল সারাদিন বাসের ছাদে বসে মেছেদা থেকে নন্দীগ্রাম, খুব ফাটিয়েছিলাম মানসকে,  মৌসুমিকে, মৌসুমি, আগে এমকেপি, পরে তৃণমূল হয়ে গেছিল, আমি আন্দাজ করেছিলাম, কবীর সুমনকে গালাগাল দেওয়া দেখে। তো সেদিন ঘটনাস্থল থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রাম কলেজের সামনে মিটিং করে স্টেজের উপর থেকে প্রভাস ঘোষের তোতলানি শুনে, হঠা সিদ্ধান্ত নিলাম, , যাবি যেখানে গুলিগালা চলেছিল,  একবার দেখে আসবি? ট্রেকারের ছাদে উঠে চলেছি তো চলেছি, এক জায়গায় দেখি এখানে রাস্তাকাটা হয়েছিল, এই তো!  নাম্ নাম্!  এসে গেছি, যেন মক্কা!  তীর্থ করতে এসেছি, গিয়ে বলতে পারব হ্যাঁ মজা আছে এসবে, আমি বলেছিলাম, ফুর্তি আছে
আমি বলেছিলাম, জীবনটাই ফুর্তি করার জন্য। কবিতা, গান, নাচনকোঁদন, সবই ওই ফুর্তি বাজি, কবিতার মজা, একটা নেকুপুশু সব বুঝি, কিন্তু কিছুতেই আমার কিছু যায় আসে না ভাব, কিংবা আর এক ধরণের প্রবল বিদ্রোহী কবির দল, বেশিরভাগ পাঠক যাদের লেখা পড়ে না, যারা পড়ে, তারা কবিকে ফোন করে জানায়, আমি ওই আপনাদের কবিতাটবিতা খুব বুঝি না (লাগানো বোঝো বাঞ্চো!) কিন্তু আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, একবছর পর দেখা হলে বলবে, মমতার একবছরের শাসন নিয়ে কিছু লিখলেন? যেন শালা কুণাল ঘোষ কিংবা সুমন দের, অঞ্জন বন্দোপাধ্যায়ের   কাজটাও কবি’কে করতে হবে, এরা ইউনিভার্সিটির বিপ্লবী, সবাই নিজেকে ভাবে, চে গুয়েভারা, জিগেস করলে বলে, রাইট একটিভিস্ট, গান মানে বেশ একটা পুজো পুজো ব্যাপার, বেশির ভাগের কাছেই, গান মানে সুমনকে গালাগাল, আর রশিদ খানও বুঝি না, হঠা রিংটোন বেজে উঠবে, আকাশ ভরা--... তা শালা আকাশ ভরা তো তোর বাবার কী! রবীন্দ্রনাথকে পোংগায় ঢুকিয়ে ছেড়ে দেবে,  নাহলে অদ্ভুত সুরে গিটার নিয়ে মঞ্চ দাপিয়ে শব্দদূষণ! একটা মাঠে দুটো গরু, একটা মোটা একটা সরু! আর আছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হেঁড়ে গলায় বিস্তর চেঁচিয়ে লোক-খ্যাপানোর গান, শুনলে হঠামনে হবে দেশে গৃহযুদ্ধ চলছে! তবে অবশ্য এদিক থেকে নাচ একটা বেশ কমপ্লিট ফুর্তির প্যাকেজ, একধরণের সাধু সাধু যৌনতা, মেয়ে দেখার নিরাপদ ব্যবস্থা, সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, সিনেমা ওই নেড়ামুন্ডি, একের পর এক রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস গুলোর নুনুপুশু সেলুলয়েড-সংস্করণ, আর নাহলে লে দেদার ছ্যাবলামি! তিন ইয়ারি কথা, মরে যাই মরে যাই! চ্যংফোচকে  স্টুপিডদের জন্য নতুন-যুগের বাংলা ছবি, খিস্তি-খেউর জামাতোলা জামাখোলাখুলিটাই টেক্সচার,  ছেলেরা বেশি বাপ-মা-তুললে সাহসী, মেয়েরা বেশি জামা তুললে, বিরঙ্গনা! বাঙালি এখনও বিশ্বাস করে, সংস্কৃতিতে শালারাই সেরার সেরা, মাথার ওপর রবীন্দ্রনাথ আছেন, সত্যজিৎ আছেন আবার কী! এমন অন্ধকার যুগ বোধায় বাঙালি আগে কখন পার হয় নি।
বাবা একটা শব্দ বলত, পাজ্জামি কিংবা পাজ্যামি কিংবা পাইজ্জ্যামি কিংবা আসলে এই শব্দটা লেখার মতো ক্ষমতাই বাংলালিপির নেই, দিয়ে এই শব্দ লেখা যাবে না, Z তো ইংরেজি বাংলায় এরকম অনেক শব্দ আছে, যা লেখা যায় না, সংস্কৃত পণ্ডিত বিদ্যাসাগর মশাই-এর বাংলা ভাষার জ্ঞান কতটা ছিলো? নিজে তো মেদনিপুরের, সংস্কৃত শিখতে গিয়ে বাংলা ভুলে গিয়েছিলেন যে, বাংলায় আর একটা জ, আর একটা ফ আছে, আরও কিছু বাংলা ব্যাঞ্জনবর্ণ আছে, যাদের লিপি নেই, জানতেন না? নাকি জেনেও এড়িয়ে গেছিলেন, বদমাইশি? নাকি জানতেন এমন একটা বাঙালি জাতির উন্মেষ ঘটতে চলেছে, যারা কলকাতার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিজেদের পোশাকআশাক থেকে ছালচামড়া পর্যন্ত তুলে, ফর্সা করে দেবে, ফোঁপরা করে নিজেদের! ইংরেজপোষ্য  বিদ্যাসাগর রামমোহনরা আমাদের আধুনিক করতে চেয়েছিলেন, যেমন আধুনিকতায় তাঁরা বিশ্বাস করতেন, এখন যেমন আনন্দবাজার বিশ্বাস করে, বাঙালিকে আধুনিক করতে চায়, জাতটার বিগরে যাওয়া শুরু ওই বিদ্যাসাগর মশাইদের হাত ধরেই
 বাবা বলত, পাইজ্জ্যামি করিস না! বাবা এখন আর বলে না, গায়ে-গন্ধ লুঙ্গি আর শার্টপরা বাবা এখন কিছু বলে না, চুপচাপ খায়দায় নাক ডেকে ঘুমোয়, ডেকে দিলে, উঠে চলে যায়, কাউকে কিছু বলার নেই, কারও থেকে কিছু শোনার নেই, শুধু চালিয়ে যাওয়া, কী চালিয়ে যাওয়া জানার দরকার নেই বাবা বলত, পাইজ্জ্যামি অইতে আসে হবখানে! সব হালায় সমান!  ওই ভাষায় বাবা আর বলে না, মাতৃভাষা ভুলে গেছে বাবা, চটি পরার অভ্যাস ছিল না যার, মা রাগ করত বলে, বাড়ি থেকে বেরনর সময় চটিটা পায়ে গলিয়ে বেরত, তারপর কিছুটা গিয়ে, খুলে ব্যাগে ভরে নিত, আবার ফেরার সময়… বাবা আসলে চটিটা বাঁচাতে চাইত, জানত, একটা চটি পরে কী করে চার বছর কাটাতে হয়, বাবা তার চটি নিয়ে ভাবত,  ভাষা নিয়ে সংস্কৃতি নিয়ে ভাবার সময় বাবার মতো  মানুষের থাকে না। বাবা এখন চটি পড়তে শিখে গেছে।
কেউ জয়গুরু! কেত্তন করলেই জগত উদ্ধার, অনুকূলবাদী কেউ ভাবে, আজান, যারা মুসলমান নয়, তারা অমানুষ কেউ জেসাসবাদী, যারা রবিবার চার্চে যায় না, তারা পতিত, মরার পর তারা সালফারের আগুনে কী জ্বলা যে জ্বলবে, শালাদের সেটা ভেবেই সুখ, তাই ভয়ে ভয়ে চার্চ, ফাদার আর গস্পেল,  বাবানামকেবলম, কেত্তন যারা করে না, কোনমানে নেই তাদের জীবনে, আনন্দমার্গ,   রামকৃষ্ণ,  মাসে একদিন জমায়েত, যারা যায় না, করুণার পাত্র, গরু ছাগল, কেউ মাও সে তুং, লেনিন,  রাস্তায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা,  পুলিশপ্রশাসন কেন্দ্ররাজ্য সবার গুষ্টির ষষ্টিপুজো,  যারা করে না, তারা  দালাল, শ্রেনিশত্রু!
পাইজ্জ্যামি হচ্ছে বলে বোধায় বাবা বোঝাতে চাইত, ছ্যাবলামি চলছে, আমরা বুঝতে পারি ছ্যাবলামিই চলছে সবখানে, কিন্তু কিছু বলি না, বলে লাভ নেই, শোনার কেউ নেই। খাওদাও নাক ডেকে ঘুমাও। মা বলে, যে সয়, সে রয়! সহ্য করো, দাঁতে দাঁত টিপে সহ্য করো, বলেছি না, তাতেও বেশ ফুর্তি আছে।
ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের রাজত্ব কোনোদিন আসবে না সাম্যবাদ কিংবা কচুঘন্ট কিছুই হবে না যে গোছানোর গুছোবে, যে ছড়ি ঘোরানোর ঘোরাবে, নন্টেফন্টেদের বিদেয় করে  তিরিশবছর বাদে আমরা এঁচড়েপাকা গোপালভাঁড়দের বরণ করব, তারপর আবার কী! গনেশকে চাঁদুদাকে তো মিছিলে হাঁটতেই হবে ভাইকে পালিয়ে আসতে হবে, বাবাকে একুশে জুলাই সিপিয়েমের ভয়ে, তৃণমূলের ভয়ে, বিএসেফের ভয়ে বিএনপির ভয়ে আমাদের… কে বলল, এতেও ফুর্তি নেই!
সেলুনে দাড়ি কেটে বেরচ্ছেন, দশটাকা দিয়ে এগিয়ে দেবার পর কী করবেন? আন্দাজ করবেন, আপনি জানেন না,  কটাকা ফেরত দেবে! দোকানিও উচ্চবাচ্চা করছে না, ভয় পাচ্ছেন, একবার দাড়ি কাটতে এবার থেকে দশটাকা হয়ে গেল না তো? গতমাসে গনেশ চায়ের দাম বাড়িয়ে তিনটাকা করে দিল, জিগেস করতে, হাসি, আপনি জানেন ওটা কতটা ভয়ঙ্কর! আগের মাসে দাড়ি কেটে পাঁচটাকা নিয়েছিল, আপনিও আমার মতো মাসে একবার দাড়ি কাটেন, দাম বাড়ালে জানতে পারেন না, জিগেস করতে সংকোচ, যদি মস্করা করে!
সংকোচ, অপেক্ষা, আর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম আন্দাজ, যতক্ষণ আন্দাজ আপনাকে ঠিকঠাক সঙ্গ দেবে,আপনি আছেন, না হলেই কী! বলিনি, প্রতিরোধহীন ফুরিয়ে যাওয়াই শিল্প!

হাম তুম এক কামড়েমে বন্ধ হো... 

No comments:

Post a Comment